বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঁচটি নদীর ‘বাঁধ’ যা দেখলে আপনি আবাক নি হয়ে পারবেন না

১২:০৪ PM
নদী শাসনের এই জামানায় বাঁধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষ যখন থেকে নদীর উপর বাঁধ দিতে শুরু করেছে তখন থেকেই ঝামেলার শুরু। নদীর গতিপথকে পাল্টে দিয়ে মানুষ তার নিজের সুবিধার জন্য ভিন্ন ভূমি ও সেই ভূমির মানুষদের পরোক্ষ অর্থে হত্যা করতেও পিছপা হচ্ছে না।
সম্প্রতি ভারত সরকার নদী শাসনের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আর এই নদী শাসনের খেসারত যেমন পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে দিতে হবে তেমনি গোটা বাংলাদেশকেও দিতে হবে। এবারের ইস্যুতে বিশ্বের এমনই কয়েকটি বড় বাঁধের বর্ননা দেয়া হলো, যেগুলো মানবসভ্যতার ইতিহাসে আপাত আর্শীবাদ হিসেবে দেখানো হলেও আখেরে রয়েছে এর প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব।
2015_09_07_15_48_46_lF5VlHCnHhvMOprIxmQoSzpoURDc5r_original
থ্রি জর্জেস বাঁধ
চীনের সান্দোপিং শহর পার্শ্ববর্তী ইয়াংজে নদীর উপর বিশ্বের সর্ববৃহত হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধটি তৈরি করা হচ্ছে। দেশটির পরিকল্পনা অনুযায়ী এই বাঁধের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ২০১২ সালের জুলাই মাসের ৪ তারিখ থেকে মূলত এই বাঁধটি তার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। বাঁধটির মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়েছিল ২০০৬ সালে। কিন্তু বাঁধের একেবারে তলদেশে একটি টারবাইন বসানো নিয়ে ঝামেলা শুরু হওয়ায় বাঁধটির কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছিল। এই বাঁধটি নিয়ে ভারত-কম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে কয়েকদফা প্রতিবাদ জানানো হয়েছে চীন সরকার বরাবর। কিন্তু দেশটির শাসকরা এই বাঁধ প্রশ্নে কোনো আলাপেই রাজি নয়।
2015_09_07_15_49_22_cNNRJ3XhfwHuKCcyCsKQLxLjKpPJd6_original
ইতাইপু বাঁধ
ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের মধ্যবর্তী পানামা নদীর উপর তৈরি করা হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাঁধ ইতাইপু। বৃহত একটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়ার জন্য এই বাঁধটি করা হয়েছিল। কিন্তু বাঁধটি করার পর ক্রমশ ব্রাজিলের বিভিন্ন স্থানের নদীর গতিপথ পাল্টে যাচ্ছে। যে কারণে ইতোমধ্যেই মহাবন আমাজানের অনেক অঞ্চল বৃক্ষহীন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আমাজানের আদিবাসী জনগোষ্ঠি এই বাঁধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে ব্রাজিল সরকারের নির্যাতনের মুখে তাদের সরে যেতে হয়। শুরুর দিকে এই বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের অর্ধেক প্যারাগুয়ের পাওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে ব্রাজিলই বিদ্যুৎ সুবিধা বেশি গ্রহন করছে।
2015_09_07_15_50_03_waaPCjvOGfUd8IbFZLJh4axPkhNnXK_original
তুকুরুই বাঁধ
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের পারা রাজ্যের তোকাতিন নদীর উপরের বাঁধটির নাম তুকুরুই। এই বাঁধটিও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৯৭৫ সালে বাঁধটির কাজ শুরু হয়ে ১৯৯৮ সালে শেষ হয়। যদিও বাঁধটির কাজ চূড়ান্ত অর্থে শেষ হয় ২০১০ সালে। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাঁধটি তৈরি করা হয়েছিল তা মূলত পূরণ হয়নি। উল্টো পারা রাজ্যের বৃহদাংশ মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে।
2015_09_07_15_50_33_V7FBh3xsGHsqjHTr6nEl0YkozSGplj_original
গুরি বাঁধ
ভেনেজুয়েলার বলিভার রাজ্যের ক্যারনি নদীর উপরে তৈরি হয় গুরি বাঁধ। পুরো বাঁধটি ৭,৪২৬ মিটার লম্বা এবং ১৬২ মিটার উচু। মূলত ১৯৬৩ সালে বাঁধটির কাজ শুরু হয়ে ১৯৭৮ সালে শেষ হয়। তবে ২০০৯ সালে এই বাঁধের ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে ১০,২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এই বাঁধটির কারণে গোটা লাতিন আমেরিকার ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিস্তার চাপ পরছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন।
2015_09_07_15_51_11_H1wsik3CzoocrpdM4NWm7p9TjF1pJh_original
ফোর্ট পিক বাঁধ
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম বাঁধটি হলো ফোর্ট পিক। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি নদীর উপর ৬,৪০৯ মিটার লম্বা এই বাঁধটি নির্মানে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তারপরেও ক্যাটরিনার মতো ঘুর্ণিঝড়ের প্রকোপতায় মিসৌরি নদীর পানি বাড়লে গোটা মনটানা অঞ্চলটি প্লাবিত হয়ে গিয়েছিল। ক্যাটরিনা পরবর্তী সময়ে এখনও মনটানা-মিসৌরি অঞ্চলের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়নি।

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »