প্লিজ এই বাস্তব গল্প টা পড়ে কেও কাঁদবেন না !

৩:৪০ PM
obak ajob এর চিত্র ফলাফল

এই মেয়েটা কিছুদিন
আগে মারা গেছে ক্যানসারে । তার ফেসবুক
আপডেটগুলো একজন শেয়ার করেছে । পড়ে
শেয়ার না করে পারলাম না । বাস্তবতা কি
জিনিস, তা দেখিয়ে দিয়ে গেলো.... ও হে তার নাম তাই ত বলা হইনি তার নাম 
 তাহমিদা জান্নাত
৭-৩-২০১৩......... 
আজ আমার ক্যান্সার জীবনের সপ্তম দিন।
খবরটা বাবা মা আমাকে দেয়ার সাহস করে
নাই । সারিন আমাকে জানায় আমার
লিউকেমিয়া । কিভাবে নিব ব্যাপারটা
বুঝতে পারছিলাম না । আমিতো ক্যানসারকে
চাই নাই । তাহলে সে কেন আসলো আমার
কাছে । আমিতো অন্য কাউকে চেয়েছিলাম...
যাহা পাই তাহা চাইনা ।
১৩-৭-২০১৩.........
শেষ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হল আমার.. ।
ব্লিডিং বেড়ে যাচ্ছে । কি অদ্ভুত । একসময়
জ্বরের ভান করে পড়ে থাকতাম । আর এখন
স্কুলে যাওয়ার জন্য সুস্থ থাকার অভিনয়
করতে হয় । পোয়েটিক জাস্টিস ।
ক্যান্সার মনে হয় একটা মানুষের অতীতের সব
খোজ খবর নিয়ে আসে । এই যে একসময় বৃষ্টি
ভালো লাগত না । কিন্তু এখন যেন বৃষ্টিকেই
আপন মনে হয় । রোদ অসহ্য লাগে । রোদ
আমাকে আমার অক্ষমতার কথা মনে করিয়ে
দেয় ।
২২-৯-২০১৩.........
আজ আমার বন্ধুরা আমাকে দেখতে এসেছিল ।
ঐশি, মৌমিতা,সানি, রিয়ন । অনেকদিন পর
একটা ভালো সময় কাটালাম । কিন্তু কোথায়
যেন সুরটা কেটে গেছে । আমি জানি ওরা
আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে । সানি আমার
চোখের দিকে তাকাচ্ছিল না। লজ্জায়
বোধহয় । সম্পর্কটা শেষ হয়েছে প্রায়
তিনমাস । আমার ক্যান্সারের কথা শুনে
সানিই আস্তে আস্তে দূরে সরে যায় । আমি
জানি ও আর মৌমিতা প্রেম করা শুরু করেছে
। খারাপ লেগেছে ওরা আমাকে খোলা মনে
ব্যাপারটা জানালেই পারত। সত্যি কথা
শোনার অধিকার কি থাকেনা একজন ক্যন্সার
রোগীর । সবাই এমন অভিনয় করে কেন ?
১৬-১-২০১৪.........
অনেকদিন লিখিনি । অনেক দেরি হয়ে গেছে
। রোগটা আমাকে গ্রাস করে ফেলছে ।
ইদানিং সানিকে খুব মনে পড়ে । ওকে ফোন
দেই ধরেনা । ক্যান্সার তো ছোঁয়াচে না ।
তবে কেন এত অবহেলা । আজকাল রিসানের
সাথে কথা বলে সময় কাটে আমার। ছেলেটার
সাথে আমার ফোনে পরিচয় । কোন শর্ত
ছাড়াই ভালোবাসে আমায় । কিন্তু আমার
কিছু করার নেই । একজন ক্যান্সার রোগীর
কাউকে ভালোবাসার কিংবা কারো
ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার নেই ।
২৬-১-২০১৪.........
দ্বিতীয় কেমো দিয়ে বাসায় আসলাম । চুলের
ব্যপারে সবসময় একটু বেশি খুত খুতে ছিলাম
আমি । নতুন নতুন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু
কন্ডিশনার কিনতাম । এখন আর ওসবের
প্রয়োজন হয়না । চুলই নেই, শ্যাম্পু দিয়ে কি
করব । কাজের বুয়াকে বলে ড্রেসিং
টেবিলটাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি ।
আয়নায় তাকাতে ভালো লাগেনা । এদিকে
বাবা মার মধ্যে ঝগড়া বেড়েই চলেছে দিন
দিন । এই সম্পর্ক বেশিদিন টিকবে না আমি
জানি । ওইদিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি
বাবা আমার পায়ের কাছে বসে কাদছে ।
ভালোবাসার বিয়ের এ কি পরিণতি ।
ভালোবাসার থেকে বোধহয় ক্যান্সারও
ভালো...
২-২-২০১৪.........
২৬ ঘন্টা পর আমার জ্ঞ্যান ফিরল । রিসানের
সাথে ঝগড়া করলাম অনেকক্ষন । ওর সাথে
ঝগড়া করতে আমার ভালো লাগে । ঝগড়া
করার কেউ থাকা লাগে জীবনে । না হলে
বেঁচে থাকাটাই বৃথা...
১৩-৩-২০১৪.........
গত ৪৮ ঘন্টায় আমায় নিয়ে যমে ডাক্তারে
টানাটানি হয়েছে । আমি আমার সর্বশক্তি
দিয়ে চেষ্টা করেছি ডাক্তাররা যাতে
জিতে । কিন্তু জানি শেষ পর্যন্ত জয়টা
ক্যান্সারের হবে । লিখার শক্তি পাচ্ছিনা...
সানিকে অনেক মিস করছি । যদিও মিস
করাটা উচিত না । ক্যান্সার রোগীদের
কাউকে মিস করার অধিকার নেই...
২৫-৫-২০১৪.........
এই লিখাটাই বোধহয় আমার শেষ লেখা হতে
যাচ্ছে । শেষ শক্তিটুকু জমিয়ে লিখাটা
লিখছি । আমার রেখে যাওয়া জিনিসের
মধ্যে ডায়রিটা রিসানের ভাগে পড়েছে ।
ছেলেটার মধ্যে মানুষের মুখে হাসি
ফোটানোর ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা আছে । ও
অনেক ভালো থাকুক । লিখতে লিখতে
চোখের কোণে জল জমে একফোটা । এই
জলটা
কার জন্য । জানিনা । খুব মিস করব । বাবা
মাকে, আমার ছোট্ট বোনটাকে । বন্ধুদের
মিস তো করবই । সানি ভালো থাকুক । স্কুলের
সামনে যে মামাটা আচার বিক্রি করত,
তাকেও মিস করব অনেক । আচ্ছা, স্বর্গে কি
আঁচার বিক্রি হয় । মনে হয়না । আরেকটা দিন
বেঁচে থাকার শখ ছিল । আফসোস । যাহা চাই
তাহা পাইনা ।
অবশেষে মে মাসের ২৭ তারিখে তার যুদ্ধটা
শেষ হয়...

Share this

Related Posts

Previous
Next Post »